নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ
Pic Source:Pixabay |
ভূমিকা : মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে যে সব বাধা আজও কঠিন প্রাকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিরক্ষরতা তার অন্যতম। মানুষের অগ্রগতিতে অসংখ্য রকমের প্রতিবন্ধকতা অতীতেও ছিল, আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সব বাধার উৎস হয়ে আছে নিরক্ষরতা। কথাটা ঘুরিয়ে বললে দাঁড়ায়—নিরক্ষরতা থেকেই সকল দুর্ভোগের জন্ম। আজও সমাজে নিরক্ষর লােককে মানুষ বলেই গণ্য করা হয় না। কবির ভাষায়-
“লেখাপড়া করে যে ।
গাড়িঘােড়ায় চড়ে সে।
লেখাপড়া
জানে না।
কেউ তারে মানে না।”
তাই নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে অভিযান আজও আমাদের কাছে প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। সমস্যাসংকুল পৃথিবী মেরুদণ্ড উচু করে দাঁড়াতে আজও শিক্ষাকেই অবলম্বন করতে হবে অন্যতম জীবনীশক্তি হিসেবে। |
নিরক্ষরতার পরিণাম : লেখাপড়া না জানলে মানুষ কার্যত দৃষ্টিহীন বলে বিবেচিত হয়। তারা সকল ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। প্রাপ্য সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যায়। জাতীয় উন্নয়নে তারা অংশ নিতে পারে না। অপগণ্ড মানুষ হিসেবে তারা সমাজের বােঝা হয়ে থাকে। এই বােঝা বহন করতে গিয়ে জাতি রিক্ত-নিঃস্ব হয়ে যায়। ভেঙে যায় রাষ্ট্রীয় বুনিয়াদের মেরুদণ্ড। |
অন্যদিকে অশিক্ষার হাত ধরে দেশে আসে দারিদ্র। দারিদ্রের অনিবার্য ফসল দুর্ভিক্ষ, মহামারী, নানাবিধ মারণ ব্যাধি। নােবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন দেখিয়েছেন ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষের মূলেও অশিক্ষা। পরিবেশ দূষণের মতাে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়ার আকরও নিরক্ষরতা। কবির ভাষায়—
“শিক্ষা হল পরশমণি|
আলাের সেরা আলাে,
শিক্ষা পেলে যায় ঘুচে
যায়
মনের যত কালাে।
মূখলােক পশুর অধম
এই পৃথিবীর বােঝা।
জ্ঞানের আলােয় কঠিন পথও
সরল এবং সােজা।”
ছাত্রসমাজের ভূমিকা : এই নিরক্ষরতার বাতাবরণ দূরীকরণে সমাজের সচেতন জনগােষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা অপরিহার্য। আর যুগে যুগে ছাত্রসমাজই হচ্ছে সমাজ বিপ্লবের মূল কর্ণধার। তারা তারুণ্য দিয়ে, বিজ্ঞান দিয়ে, প্রগতির হাওয়া দিয়ে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে সমগ্র জাতিকে মুক্তি দিতে পারে। একদিকে তারা যেমন অশিক্ষার পরিণাম সম্পর্কে আপন পরিবেশের সকলকে জাগ্রত করে তুলতে পারে, অন্যদিকে নিরক্ষরতা দূরীকরণে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাখতে পারে প্রত্যক্ষ অবদান।
Pic Source:Pixabay |
নিরক্ষরতা ও ভারত : জনসংখ্যার তুলনাবিরল বোেঝা আমাদের জাতীয় আয়কে এমন এক পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে, যার পরিণতিতে নিরক্ষরতা কর্মসূচিতে বিপুল অর্থ খরচ করা অসম্ভব। এই ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজই একমাত্র ভরসা। তারা যদি প্রতিদিন কমপক্ষে একঘণ্টা পরিকল্পিতভাবে এই কর্মসূচিতে ব্যয় করে, তবে আমাদের দেশে একটি লােকও নিরক্ষর থাকবে না। মনে রাখতে হবে একশাে কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষ। এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে এখনই ছাত্রদের দৃঢ় পদক্ষেপ এগিয়ে আসতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভের আর কোনাে বিকল্প নেই।
উপসংহার : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম দীপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন—আমরা শক্তি, আমরা বল, আমরা ছাত্রদল। ছাত্রদের তিনি যৌবনের অতন্দ্র সৈনিক বলেও বন্দনা করেছিলেন। নিরক্ষরতা নামক দৈত্যকে দেশ থেকে সমূলে উৎখাত করতে না পারলে ছাত্রসমাজের এই গৌরব ক্ষুন্ন হবে বৈকি। সর্বোপরি, আজ যারা ছাত্র, আগামী দিনে তারাই দেশের কর্ণধার। সেদিনের জন্যে সুস্থ স্বদেশ গড়তে হলে এখনই তাদের পালন করতে হবে স্থপতির ভূমিকা।
আরও অনুচ্ছেদের জন্য নীচে দেখুন👇
- সমাজের কল্যাণার্থে ছাত্রসমাজের অবদান | Contribution of students for the welfare of the society
- ছাত্রজীবনে নিয়ম ও শৃঙ্খলাবােধ | Rules and Discipline in student life
- প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ | Jibanananda Das
- আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় | Acharya Prafulla Chandra Roy
- স্বামী বিবেকানন্দ ও বর্তমান যুবসমাজ | Swami Vivekanada And Youth Society
0 Comments